মিজানপনা,রাজাপুর থেকেঃ ঝালকাঠির রাজাপুরে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের তদন্ত শুরু করেছে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার একটি তদন্ত টিম। তিন সদস্যের এই তদন্ত কমিটি আজ সকালে রাজাপুরের সাতুরিয়ার গণহত্যার শিকার পরিবারগুলো ও তাদের বাড়ি-ঘর পরিদর্শন করেন। এছাড়া তারা কাঠিপাড়া গণকবরসহ ওই দিনের গণহত্যার প্রত্যক্ষদর্শীদের স্বাক্ষ্য নেন। রাজাপুরের সাতুরিয়ার বেশ কিছু যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালে একাধিক অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত কমিটি তদন্তের কাজ শুরু করেছে। এটিই রাজাপুরের প্রথম কোন যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি। আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. হেলাল উদ্দিন এ কমিটির নেতৃত্ব দেন।
তদন্তে রাজাপুরের বেশ কিছু যুদ্ধাপরাধীদের নাম উঠে আসলেও স্বাক্ষীদের নিরাপত্তার স্বার্থে তা প্রকাশ করেনি এ কমিটি। এব্যাপারে আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, ছ আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার একটি তদন্ত টিম রাজাপুরে এসেছি। এই এলাকায় ১৯৭১ সনে যে মানবতা বিরোধী অপরাধ সংগঠিত হয়েছে এর উপরে আমাদেও তদন্ত সংস্থায় বেশ কিছু অপরাধ আছে। সে অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করতে আমরা এসেিেছ। এখানে এসে যারা স্থানীয় ভিকটিম বা ক্ষতিগ্রস্থ লোকজন তাদের সাথে আমারা কথা বলেছি। এলাকার মুক্তিযোদ্ধা ও গণ্যমান্য লোকজনের সহযোগীতায় তদন্ত কার্যক্রম চালাচ্ছি। সাতুরিয়া গ্রামে কয়েকটি ঘটনার কথা আমাদেও কাছে অভিযোগ আছে। সে ঘটনাস্থল গুলো পরিদর্শন করেছি।
সংশ্লিষ্টদেও সাথে কথা বলেছি। শেরেবাংলার জন্মস্থান সাতুরিয়ার বাড়িতে দুজন মহিলার সাথে কথা বলেছি। কারন জানাগেছে ঐ সময় এ বাড়িটিতে ব্যাপক লুটপাট করা হয়েছে। এখানে আরো কটি বাড়ি লুটপাট হয়েছিলো। ওখানে রবিন্দ্রনাথ বাবু মন্ডলকে রাজাকার বাহিনী ধরে নিয়ে হত্যা করে কাউখালীর কঁচা নদীতে ফেলে দেয়। তার ছেলে ও আত্মীয়দের জিজ্ঞাসবাদ করেছি। রাজাকার বাহিনী এ এলাকায় পাক সেনাদের সহায়তায় ব্যাপক নির্যাতন চালায়। এ এলঅকায় লুন্ঠন অগ্নিসংযোগ হত্যা ও ধর্ষনের অভিযোগ আমাদের কাছে আছে। এটা আমরা পর্যায়ক্রমে তদন্ত করে দেখছি। এখানে ১৬ জন লোককে হত্যা করা হয়েছে। আমাদের তদন্ত সংস্থার রেকর্ড অনুযায়ী পাক সেনা ও রাজাকারদের হাত থেকে বাঁচতে সেদিন এই এলাকার জঙ্গলে আত্মগোপন করেছিল। এই খবর রাজাকাররা পাকিস্থান সেনাদের জানিয়ে দেয় এবং এখানে গণহত্যা চালায়। আপনারা জানেন পাকিস্থান সেনাবাহিনী, আলবদর, আলসামস্ এদের মূল টার্গেট ছিলো আওয়ামীলীগের লোকজন, মুক্তিযোদ্ধা, হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনদের ধ্বংস করতে সরাসরি নেতারা হুকুম দিত। সেই হুকুমের পরিপেক্ষিতেই এই লোকজনদের হত্যা করা হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে সঠিক তত্ত উপাত্ত সংগ্রহে আমরা আবার আসতে পারি। কারণ এটা একদিনে বা একবারে তদন্ত কাজ শেষ করা সম্ভব নয় বলে এই তদন্ত কর্মকর্তা জানান।